জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার আলো (১৩) অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গত ২১ জুলাই বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন সাথী। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিটোরে ভর্তি করা হয়। প্রায় এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
পরিবার ও সহপাঠীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের দীর্ঘদিনের মানসিক চাপে ভেঙে পড়েছিলেন সাথী। প্রায় তিন মাস আগে একটি কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে সাথী ও তার বান্ধবীরা মসজিদে নূর এলাকায় ঘুরতে গেলে প্রধান শিক্ষক তাদের শাসন করেন। সেই থেকে সাথীকে বারবার অভিভাবক নিয়ে আসার জন্য চাপ দেওয়া হয় এবং স্কুল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়।
ঘটনার দিনও ক্লাসে সবার সামনে তিরস্কার করা হয় তাকে। পরে তিনি প্রথমে নিজের হাত কেটে এবং পরে ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনার পর সাথীর চাচা মুরাদ হোসেন বকশীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। শিক্ষার্থীদের তীব্র ক্ষোভ এবং অভিযোগের ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে ২৩ জুলাই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়। পরবর্তীতে বিপ্লব কিশোর চট্টোপাধ্যায়কে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সাথী আক্তার আলো ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী ও প্রতিভাবান ছাত্রী। তিনি কাবাডি খেলায় ময়মনসিংহ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে বিদ্যালয় ও এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। সহপাঠী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী তাকে স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
সাথীর পরিবার তার মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন